শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস ও এর ফজিলত
শবে বরাত মুসলিম বিশ্বের একটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ রাত। এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও মাগফিরাত বর্ষণ করেন। শবে বরাতের প্রতি মুসলিমদের গভীর বিশ্বাস এবং এই রাতের ইবাদত বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।এ রাতে, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য এক বিশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। "শব" শব্দের অর্থ রাত এবং "বরাত" অর্থ মুক্তি, তাই শবে বরাত অর্থ হলো ‘মুক্তির রাত’। এটি এমন একটি রাত যেখানে আল্লাহ তাআলা তার অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা ও মুক্তি প্রদান করেন। শাবান মাসের পঁচিশ তারিখে এই রাত্রি উদযাপিত হয়, যা মুসলিম উম্মাহর গুনাহ মাফের জন্য একটি দারুণ সুযোগ এনে দেয়।এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া কবুল করেন এবং আগামীর রিজিক, মৃত্যু ও অন্যান্য বিধান নির্ধারণ করেন। শবে বরাতের রাতে যে কেউ যদি শুদ্ধ মন ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করে, তবে তার পাপ মাফ হয়ে যায়। এর মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর রহমত লাভ করে পরবর্তী জীবনে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারে। এই রাতে বিশেষ ইবাদত, দোয়া, এবং নফল রোজা রাখা খুবই সম্মানিত ও কল্যাণকর। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি অবশ্যই মাফ করবেন, কারণ তার রহমত সমস্ত সৃষ্টির উপর ব্যাপ্ত।
শবে বরাতের ফজিলত:
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, "অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।" (সহিহ ইবনে হিব্বান, হা. ৫৬৬৫)
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, 'হে আয়েশা! তুমি কি জান এটা কোন রাত?' আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন ইরশাদ করেন, 'এটা হলো অর্ধ-শাবানের রাত। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।'" (শুআবুল ইমান, বায়হাকি)
শাবান মাসের পঁচিশ থেকে তেইশ তারিখের রাতে, আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে আসমানে উপস্থিত হয়ে তার বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং তাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (মুসলিম: ১৩৪৩)
এ রাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে যে দোয়া সবচেয়ে বেশি পড়া হয় তা হলো
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি। অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি পরিপূর্ণ ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।"
এ রাত সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত থাকলেও আলেমদের মতে, এ রাতের বিশেষ গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এটি এমন একটি রাত, যখন আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন এবং তাদের তাওবা ও দোয়া কবুল করেন।
কাজেই আমরা বলতে পারি, শবে বরাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যও বটে। এ রাতে ইবাদত করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে পারে। তাই আমাদের উচিত শবে বরাতে একাগ্রচিত্তে ইবাদত করা এবং মহান আল্লাহর রহমত কামনা করা।
আসুন, আমরা এই পবিত্র রাতে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং বেশি বেশি ইবাদত করি।
Comments
Post a Comment